মধ্যযুগে বা সুলতানি যুগে ভারতবর্ষে কৃষি প্রযুক্তি বিশেষ ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা কর ৷

মধ্যযুগে বা সুলতানি যুগে ভারতবর্ষে কৃষি প্রযুক্তি বিশেষ ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা কর ৷

মধ্যযুগে বা সুলতানি যুগে ভারতবর্ষে কৃষি প্রযুক্তি বিশেষ ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা কর ৷


ভারতবর্ষ কৃষি প্রধান দেশ ৷ ভারতের উৎপাদনের মূল উৎস হল জমি ৷ জমিকে কেন্দ্র করে কৃষকদের জীবন আবর্তিত হয় এবং তাদের জীবন জীবিকা কে কেন্দ্র করেই ভারতীয় গ্রামীণ সমাজ গড়ে ওঠে ৷ ভারত কৃষি নির্ভর দেশ হওয়ায় কৃষিকাদের অর্থনীতির মেরুদন্ড তাই আদি মধ্যযুগে কৃষি ও কৃষকদের অবস্থা কেমন ছিল তা অর্থনৈতিক ইতিহাসের গবেষকদের কাছ সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ৷



দিল্লির সুলতানি যুগে কৃষকদের জীবনে অনেক দরিদ্র ছিল। যন্ত্রণা ছিল এবং শোষণ ছিল সর্বহীন জাতির লোকেদের এ যুগে নতুন নগরায়নের বসবাস করার অধিকার দিল মিলে ছিল গ্রামীন কৃষক জীবন সহজ ও সরল ৷ কৃষি ব্যবস্থা ছিল উৎপাদনমূলক ৷ কোন ক্ষেত্রেই কৃষি উৎপাদনে যন্ত্রের ব্যবহার ছিল না ৷ বলদের লাঙ্গল ও কোদালই ছিল চাষের যন্ত্র ৷ ডক্টর কে.এস.আসরামোর ভাষায় বলা যায় প্রকৃতপক্ষে ভারতীয় কৃষক অল্পের সন্তুষ্ট এক জাত । এরা কঠিন দরিদ্রদের সঙ্গে সংগ্রাম করতে অভ্যস্ত ৷ এরা অধিষ্ঠিত বাদী সবকিছুতেই এরা ভাগ্যকে দায়ী করে ৷ ভালো ফসল হলে তারা সন্তুষ্ট হয় ৷ প্রতিদিন মাঠের কাছে নিজেদের আত্মনিয়োগ করে জীবনে ভালো কিছু পাইনে বলে তাদের জীবনে কোন আশা নেই ৷ কোন আকাঙ্ক্ষাও নেই এই হলো শাশ্বত সনাতন কর্মজীবনের সম্মুখ পরিচয় ।




১২০৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষে হিন্দু সাম্রাজ্যের পতন এবং মুসলিম সাম্রাজ্যের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্যে দিয়ে এক যুব সন্ধিক্ষণ ঘটে ৷ এর ফলে অর্থনৈতিক , সামাজিক,সাংস্কৃতিক,রাজনৈতিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে একাধিক পরিবর্তন সূচিত হয় ৷ পূর্বে ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কোন ঐক্য ছিল না ভারত ছিল একাধিক খন্ডে বিভক্ত এবং পরিচালিত ৷ কিন্তু সুলতানদের আগমনের পর ভারত বর্ষ একটি অখণ্ড সাম্রাজ্যে পরিণত হয় ৷ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পূর্বে তার ব্যবস্থা কোন কোন সুনির্দিষ্ট ছিল না। কিন্তু মুসলিমদের আগমনের পর ইক্তা ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে সুনির্দিষ্ট কর ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল এই সবকিছু ছাড়াও কৃষি কাজে যন্ত্রপাতি ও কলা কৌশলের পরিবর্তন ঘটে ৷ ফলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিপ্লব দেখা যায় ৷ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সুলতানদের আগমনের এক ব্যাপক পরিবর্তন সূচিত হয় এবং দূর বাণিজ্যে অনেক বেশি সম্প্রসারণ লক্ষ্য করা যায় । শিল্প বাণিজ্যেকে কেন্দ্র করে নগর সভ্যতা ও উদ্ভব এবং বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের পাশাপাশি অবস্থানে সামাজিক এবং কৃষি ক্ষেত্র গতিশীলতা সূচিত হয় ৷


১৩৪৬ থেকে ৪৭ খ্রিস্টাব্দে "দেওয়ান-ই-আমির-কোহি " উচ্চ পদস্থ কর্মচারীর অধীনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কৃষি বিভাগ খোলা হয় এবং চাষের উন্নতি ঘটে ৷ মহাম্মদ বিন তুঘলকের উত্তরাধিকারী ফিরোজ শাহী তুঘলকের আমলে কৃষির উন্নতির জন্য অসেচভুক্ত জমিকে সেচের আওতায় আনা হয় । "ক্যামব্রিজ হিস্ট্রি অফ ইন্ডিয়া" নামক গ্রন্থে ফিরোজ শাহ তুঘলকের ভারতবর্ষের "সেচ পরিকল্পনার জনক" বলে অভিহিত করেছেন ৷ ঐতিহাসিক ফেরিশ্তার মতে,"এই সেচ কার্যের ফলে খারিফ ও রবি শস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পায় ৷ আফিফ বলেন,"এর ফলে দেশের সর্বোচ্চ কৃষির চরম বৃদ্ধি ঘটে এবং নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম সস্তা হয় ৷"




সেই সময় ভারতবর্ষে কৃষিকাজে একমাত্র যন্ত্র ছিল বলদ,লাঙ্গল এবং কোদাল ৷ কিন্তু সুলতানদের আগমনের পর কৃষির বিকাশ নতুনত্ব প্রযুক্তির সমাবেশ ঘটে ৷ যেমন শস্য মাড়াই করার যন্ত্র, হামাল দিস্তা, মাটি ওলট পালট করার যন্ত্র, সিডড্রিল প্রভৃতি । যার ফলে কৃষির উন্নতি সুলতানি যুগে অনেকটা বৃদ্ধি করেছিল ৷




এগুলি ছাড়াও সুলতানি যুগে আরো প্রযুক্তি লক্ষ্য করা যায় ৷ যথা বিশেষ সেচ ব্যবস্থা,উন্নত জলসেচ ব্যবস্থা,এক বিশেষ যাঁতা কল,বিশেষ মোটর চালিত যন্ত্র দ্বারা কোন ভারী জিনিস কে উঁচুতে তোলার ব্যবস্থা করা হয় ৷ এছাড়াও আছে অন্যান্য প্রযুক্তি ৷ এইসব প্রযুক্তির সমাবেশে কৃষকদের জীবনযাত্রার মান সচ্ছন্ন হয় ৷ কৃষি ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নতি ঘটে এবং সর্বোপরি প্রযুক্তির পরিমণ্ডলে সুসংহত রাষ্ট্র শক্তির বিকাশ সম্ভব হয় ।

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟