আদি মধ্যযুগের স্থাপত্য ও ভাস্কর শিল্পের বিকাশ সম্পর্কে আলোচনা কর

আদি মধ্যযুগের স্থাপত্য ও ভাস্কর শিল্পের বিকাশ সম্পর্কে আলোচনা কর

 আদি মধ্যযুগের স্থাপত্য ও ভাস্কর শিল্পের বিকাশ সম্পর্কে আলোচনা কর


আদি মধ্যযুগের স্থাপত্য ও ভাস্কর শিল্পের বিকাশ সম্পর্কে আলোচনা কর


প্রাচীন যুগ ও আদি মধ্যযুগের সংযোগকালে ভারত পরিভ্রমণরত চৈনিক হিউয়েন সাং প্রমুখ ভারতের শিল্পধারার যে বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছেন তাতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে তখন ভারতে এবং বিশেষভাবে পূর্ব ভারতে বহু বিচিত্র ও কারুকার্যে খচিত বিহার,প্রাসাদ ইত্যাদি নির্মিত হয়েছিল ৷ ডক্টর রমেশ চন্দ্র মজুমদার বলেছেন,"প্রাচীন প্রশস্তিকারের উচ্চসৃত ভাষায় যে সকল বিশাল গগন স্পর্শী মন্দির,ভূষণ,কুল,পর্বত বা সূর্যের গতি রোধকারী বলে বর্ণনা করেছেন আজ তাদের চিহ্ন মাত্র নেই৷"আদি মধ্যযুগের ভারতের স্থাপত্য শিল্পের কেন্দ্র ছিল মন্দির গুপ্তযুগের মন্দির স্থাপত্যের সূচনা হলে হলেও বৈচিত্র অলংকারের দিক থেকে আদি মধ্যযুগে মন্দির শিল্প আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে ৷ ভারতীয় মন্দির শিল্পে তিনটি ধারা উপস্থিতি দেখা যায় নাগর রীতি,দ্রবিড় রীতি , বেসর রীতি ৷


আদি মধ্যযুগে বাংলার শিল্পচর্চার মধ্যে স্থাপত্য, ভাস্কর্য,স্তূপ,বিহার,মন্দির ইত্যাদি সবই ছিল ৷ সন্ধ্যাকর নন্দীর "রামচরিত" গ্রন্থে একাদশ শতকে বাংলার প্রসাদ মহাবিহার ও মন্দির ছিল বলে গর্ববোধ করেছেন ৷ কিন্তু তাদের সবই কালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ৷ ডক্টর রমেশ চন্দ্র মজুমদারের ভাষায় বাংলার স্থাপত্য শিল্পে কীর্তি আছে কিন্তু নিদর্শন নেই ৷ চীন দেশীয় পর্যটকরা বাংলাদেশে অসংখ্য স্তুপ এর কথা উল্লেখ করেছেন ৷ কিন্তু পাথরের অভাব হেতু ইটে নির্মিত এই সকল স্তুপের অধিকাংশই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে ৷




কূপের মতই বিহার গুলি ধ্বংস শেষ পাওয়া গেছে ৷ ভিক্ষুকদের বাসস্থান হিসেবে বিহার গুলির পরিচালনা ও নির্মাণ করা হতো । পরে এগুলির বিদ্যা চর্চার ক্ষেত্রে পরিণত হয় । রাজশাহীর অন্তর্গত পাহাড়পুরে এক বিশাল আকারের বিহারের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে ৷ সম্ভবত পাল রাজা ধর্মপাল এটি নির্মাণ করেছিলেন ৷ এই বিহারটি সোমপুরি বিহার নামে বিশ্বখ্যাত হয়ে আছে ৷ বিশাল আকার এই বিহারের চতুষ্কোণ অঙ্গটি প্রতিটি দিকে ৩০০ গজ দীর্ঘ ছিল ৷ একটি উচ্চ প্রাচীর দ্বারা অঙ্গনটি পরিবেষ্টিত ছিল, প্রাচীরের চারিদিকে ভিক্ষুকদের বসবাসের জন্য ১৮০ টি সারিবদ্ধ ভাবে কক্ষ নির্মিত ছিল ৷




"রামচরিত" গ্রন্থে রামাবর্তী কে 'ঈশ্বরের অধীস্তান ক্ষেত্র' বলা হয়েছে কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হল এই সকল মন্দিরের অধিকাংশই কেবল ধ্বংস স্তূপের মধ্যেই জেগে আছে ৷ আদি মধ্যযুগের মন্দির শিল্পের নিদর্শন হিসেবে সম্পূর্ণ বিহারের মধ্যবর্তী অঙ্গনের মন্দির গুলির নজরে পড়ে ৷ মন্দিরের চাল নেই চূড়া আছে চারিদিকে প্রাচীর ভেঙ্গে পড়েছে,প্রদক্ষিণ পথ ঢাকা পড়েছে, ইট এই বিরাট ধ্বংসাবশেষ সামলে দাঁড়িয়ে এই গঠন রেখা ও রীতি ধীরে ধীরে অনুসরণ করলে এই আকৃতি ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে যায় ।




আদি মধ্যযুগের স্থাপত্য শিল্পের উজ্জ্বল কেন্দ্র দাক্ষিণাত্য ও দক্ষিণ ভারত ৷ এ প্রসঙ্গে পল্লব রাজাদের প্রথমে উল্লেখে দাবি রাখে ৷ এ প্রসঙ্গে স্মরণীয় প্রাচীন যুগ ও আদি মধ্যযুগের সংযোগ কাল পল্লব রাজারা ক্ষমতাশীল ছিলেন ৷এই বংশের প্রধান দুই শাসকের রাজত্বকালে আদি মধ্যযুগের কাল সীমার অন্তর্ভুক্ত হয় ৷ এই পর্বের অনন্তশায়ন মন্দির, ভৈরবকুন্ডের মন্দির, মহাবলীপুরমের মন্দিরগুলি নির্মিত হয়েছিল ৷




আদি মধ্যযুগে পল্লবদের দ্বিতীয় ধারার মন্দিরগুলি নির্মিত হয় ৷ এগুলি প্রথম অধ্যায়ের মতো পাহাড় কেটে তৈরি নয় । এগুলি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র ভাবে নির্মিত হয় । এই মন্দিরগুলিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়, প্রথম ভাগের পরে রাজ সিংহ গোষ্ঠীর রাজত্বকালে নির্মিত মন্দির গুলি ৷ দ্বিতীয় ভাগে অন্তর্ভুক্ত হয় নন্দী বর্মনগোষ্ঠীর আমলে মন্দিরগুলি ৷ প্রথম পর্বের দুটি বিখ্যাত মন্দির হল কাঞ্চীপুরমের কৈলাসনাথ মন্দির এবং বৈকন্ঠপুরমল মন্দির ।




পল্লব যুগে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র মন্দির স্থাপত্যের যে রীতি চালু হয়েছিল চোলদের আমলে তা পূর্ণতা পায় । পল্লব স্থাপত্য দ্রাবিড় শিল্প রীতি চোলদের আরো পরিশীলিত হয়ে পড়ে ৷ দ্রাবিড় রীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হল প্রধান গর্ব গৃহের উপর স্থল নির্মাণ ৷ পাঁচ থেকে সাতটি তল থাকতো একে বলা হত "বিমান" ৷ গর্ভগৃহের সম্মুখে থাকতো থামা বিশিষ্ট হল ঘর একে বলা হতো "মণ্ডপ"৷




আদি মধ্যযুগের জন্য স্মৃতিস্তম্ভ গুলির স্থাপত্য শিল্পের নিদর্শন হিসাবে উল্লেখ্য এর দাবি রাখে ৷ স্মরণীয় এমন দুটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাতা ছিলেন রাক চতুর্থ,রাকমল্লর মন্ত্রী চামুন্ডা রায় । এর একটি চামুন্ডারায় বসতি চন্দ্রগিরি পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ৷ এই সৌধের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ যথাক্রমে 70 ফুট 36 ফুট ৷ এটি নির্মিত হয় আনুমানিক ৯৮০ খ্রিস্টাব্দে ৷ দ্বিতীয় সৌধটির নির্মাণ কাল ছিল ৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে ৷

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟