১৯৩১-৩২ খ্রিস্টাব্দে জাপান কেন মাকুরিয়া আক্রমণ করেছিল -তা আলোচনা করো। মাকুরিয়া সঙ্কটের সমাধানে জাতিপুঞ্জের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো। why Japan invaded Manchuria in 1931-32 AD

১৯৩১-৩২ খ্রিস্টাব্দে জাপান কেন মাঞ্চুরিয়া আক্রমণ করেছিল -তা আলোচনা করো। মাঞ্চুরিয়া সঙ্কটের সমাধানে জাতিপুঞ্জের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

১৯৩১-৩২ খ্রিস্টাব্দে জাপান কেন মাকুরিয়া আক্রমণ করেছিল -তা আলোচনা করো। মাকুরিয়া সঙ্কটের সমাধানে জাতিপুঞ্জের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর যুগে বিভিন্ন কারণে জাপানী পণ্যে চাহিদা হ্রাসপ্রাপ্ত হয়। এই সময় যুক্তরাষ্ট্রে জাপানী সিল্কের রপ্তানি হ্রাসপ্রাপ্ত হয় এবং চিনে জাপানী পণ্য বর্জন শুরু হয়। জাপানের জঙ্গীবাদীরা এই সুযোগে আগ্রাসী নীতি গ্রহণের প্রচেষ্টায় লিপ্ত হন। ১৯২৯-৩০ খ্রিঃ বিশ্বজোড়া আর্থিক সংকটে জাপানের অর্থনৈতিক সমস্যা জটিলতর হয়। ফলে জাপানে বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। জাপানী মুদ্রা ইয়েনের মূল্যহ্রাস, পণ্যমূল হ্রাস প্রভৃতি বিভিন্ন উপায়ে আর্থিক সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। জাপানে অতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধি জাপানকে উপনিবেশ স্থাপনে প্ররোচিত করে। অতিরিক্ত জনসংখ্যার জন্য খাদ্য এবং কলকারখানায় কাঁচামালের প্রয়োজন ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি করে।


মাঞ্চুরিয়ার গুরুত্বঃ চীনের দুর্বলতার সুযোগ গ্রহণ করে জাপান ১৯৩১ খ্রিঃ মাঞ্চুরিয়া আক্রমণ করে। চীনের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত মাঞ্চুরিয়া আর্থিক দিক হতে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। এই এলাকা কয়লা, লৌহ, সোনা, রূপা, তামা ও অন্যান্য খনিজ পদার্থের উৎপাদনকেন্দ্র রূপ প্রসিদ্ধ। রপ্তানির এক-তৃতীয়াংশ ও আমদানির এক- পঞ্চমাংশের জন্য চীন মাঞ্চুরিয়ার উপর নির্ভরশীল ছিল। ১৯২৩-২৯ খ্রিঃ মধ্যে প্রার চার মিলিয়ন চীনাবাসী মাঞ্চুরিয়াতে উপনিবেশ স্থাপন করেন। মাঞ্চুরিয়ার সাথে জাপানের স্বার্থ ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। এই অঞ্চলের ৭০০ মাইল রেলপথের দ্বারা রাশিয়ার ব্লাডিভোস্তক বন্দর এবং জাপানের ড্যারিয়ান বন্দর সংযুক্ত ছিল। ফলে মাঞ্চুরিয়ার সামরিক গুরুত্ব ছিল সমধিক। মাঞ্চুরিয়াতে চীনের ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক প্রভাব জাপানের আশঙ্কার কারণ হয়ে ওঠে।


 মাঞ্চুরিয়াকে কেন্দ্র করে ১৯৩১ খ্রিঃ জাপানের সাথে চীনের সংঘর্ষ শুরু হয়। ইতিপূর্বে বহুবার যে সকল ছোটখাটো সংঘর্ষ হয়েছিল তাতে চীন-জাপান যুদ্ধের পটভূমিকা রচিত হয়েছিল। ১৮ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ মাঞ্চুরিয়া রেলপথের একাংশ ধৃৎসে লিপ্ত চীনা সেনাদের উপর জাপানী রক্ষীরা গুলিবর্ষণ করে। মুকদেনের নিকট এই ঘটনা ঘটেছিল বলে জাপানীরা অভিযোগ করে। অথচ এই রেলপথের উপর দিয়ে উক্ত দিন ট্রেন চলাচলের বিন্দুমাত্র ব্যাঘাত হয়নি। জাপানীরা আরও অভিযোগ করেছিল যে, চীন দস্যুদের হাতে একজন উচ্চপদস্থ জাপানী সামরিক কর্মচারী নিহত হন। এই দুটি ঘটনার জন্য জাপান চীনকে দোষী সাব্যস্ত করে।


 এই সকল ঘটনার অজুহাতে জাপান চীন আক্রমণ করে। জাপানী সেনাদল চ্যাংচুন হতে পোর্ট-আর্থার পর্যন্ত সমগ্র এলাকা জুড়ে সেনা মোতায়েন করে। মাঞ্চুরিয়াতে অবস্থিত দশ হাজার চীন সেনা অল্পায়াসে জাপান কর্তৃক পরাভূত হয়। জাপান অত্যল্প কালের মধ্যে চ্যাৎচন, কিরিণ ও সমগ্র মাঞ্চুরিয়া কৃফিগত করে। জাপান মারিয়ার নাম পরিবর্তন করে তার নতুন নামকরণ করে মকো এবং মাঞ্চুকোতে পূর্বতন মাঃ, সম্রাট পু-য়ির নেতৃত্বে একটি তাঁবেদার সরকার স্থাপন করে। মাঞ্চকোর রাজধানী হল সিং-কিং বা পূর্বতন চ্যাংচুন শহর।



 চীনে জাপানের পণ্য বিক্রয় হ্রাস পায়। জাপানের মাঞ্চুরিয়া আক্রমণের জাপান-বিরোধী প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এবং সমগ্র চীনে জাপ-পণ্য বর্জন করা হয়। এর খুলে কুয়োমিনতাং দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধের অবসান হয়। চিয়াংকাই কে নানকিং সরকার-বিরোধী কয়োমিনতাঙ নেতাদের সাথে জাপান আক্রমণের ফলে অন্তর্বিরোধ মায়েতের রীমাৎসায় সমর্থ হন। ১৯৩২ খ্রিঃ জানুয়ারীতে জাপ-পণ্য বর্জন আন্দোলন দমন করার মাওনা জাপান সাংহাই শহরের চীনাদের উপর সি-প্লেনের সাহায্যে বোমা বর্ষন করে। সংহাইয়ে অবস্থিত চীনা সেনাদল এই সময় বীরত্ব ও সাহসিকতার সাথে ৩৫ দিন ধরে টিপি ছাপ-আক্রমণ প্রতিরোধ করেছিল। ১৯৩২ খ্রিঃ মে মাসে ব্রিটিশ ও মার্কিন কনসাল জেনারেলদের যৌথ প্রচেষ্টায় সাংহাইতে যুদ্ধবিরতি হয়।


 মাঞ্চুরিয়াতে জাপানের আক্রমণে পাশ্চাত্য রাষ্ট্রগণ চীনকে সমর্থন ও সহানুভূতি জ্ঞাপন করে এবং জাপানের বিরোধীতা করে। কিন্তু আর্থিক সংকটে ব্যাপৃত পাশ্চাত্য দেশগুলি এই ব্যাপারে চীনকে কোনো সামরিক বা আর্থিক সাহায্য প্রেরণ করেনি। যুক্তরাষ্ট্র লীগ অব নেশনের সদস্য না হলেও মাঞ্চুরিয়া সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনার জন্য লীগের সভায় পর্যবেক্ষক প্রেরণ করে। চীনের আাপনের উপর জাপানের অহেতুক আক্রমণের জন্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে চীনের প্রতি শিয়র সহানুভূতিশীল রাষ্ট্রের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।


জাপান চীন আক্রমণ করে লীগ চুক্তিপত্রের ধারা লঙ্ঘন করে। লীগের চুক্তিপত্র ছাড়াও জাপান অন্যান্য কতকগুলি আন্তর্জাতিক চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে। এই সকল আন্তর্জাতিক চুক্তির মধ্যে কেলগ-ব্রিয়া প্যাক্ট অন্ততম। এতে বলা হয়েছিল যে, সকল ১৯৩) আন্তর্জাতিক বিরোধের মীমাংসা শান্তিপূর্ণভাবে করা হবে। জাপান এই চুক্তির ঘটঘট স্বাক্ষরকারী। কিন্তু এই চুক্তির ধারা লঙ্ঘন করে জাপান মাঞ্চুরিয়া আক্রমণ করে।


 বিশ্বজনমতের নিকট জাপান আক্রমনকারী রূপে প্রতিভাত হয়। জাপানের মাঞ্চুরিয়া আক্রমণ সম্পর্কে চীন লীগ অব নেশনের সৃষ্টি করে আকর্ষণ করে। এই সময় চীন জাপানের বিরুদ্ধে চুক্তিপত্রের ১০ ও ১৫ সংখ্যক ধারা অনুসারে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা অবলম্বন করার অনুরোধ জ্ঞাপন করে। কিন্তু ইঙ্গ-ফরাসী জাপান শক্তি জাপানের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রস্তুত ছিল না। ফলে জাপানের প্রস্তাব কয়ে অনুসারে লীগের তরফে লিটনের নেতৃত্বে একটি অনুসন্ধান সমিতি নিযুক্ত হয়। এই কমিশন লিটন কমিশন নামে পরিচিত।



এই কমিশনের সদস্য হিসাবে ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালির প্রতিনিধি গ্রহণ করা হয়েছিল। লিটন কমিশন মাঞ্চুরিয়াতে চীনের সার্বভৌমত্বের দাবী স্বীকার করে। অতএব, কমিশনের রিপোর্ট জাপানের স্বার্থ-বিরোধী হয় বলে জাপান অভিযোগ করে। কিন্তু কমিশন আপোশের জন্য মাজুরিয়াতে জাপানের স্বার্থকে স্বীকৃতি দেয়। লীগ পরিষদের এই রিপোর্ট গ্রহণ করে মাঞ্চুরিয়াতে জাপানের আক্রমনের নিন্দা করা হয়।


এরূপে চীন যখন আন্তর্জাতিক সহানুভূতি লাভ করতে সমর্থ হয় জাপান তখন বাহুবলে তার সাম্রাজ্য বিস্তার করতে চেষ্টা করে। বৈদেশিক রাষ্ট্রগুলি অথবা লীগ অব নেশনের নিকট হতে সামরিক বা অন্য কোনপ্রকার সাহায্যলাভে বঞ্চিত দুর্বল চীন বাধ্য হয়ে টংকু চুক্তি জাপানের সাথে যুদ্ধ বিরতি ও শান্তি স্থাপন করে এইরূপে কার্যত বিশ্বজনমতের বিরুদ্ধে জাপান মাঞ্চুরিয়া দখল করে। ১৯৩৩ খ্রিঃ মে মাসে টংকুর চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ইতিপূর্বে মার্চে জাপান লীগের সদস্যপদে ইস্তফা দেয়। মাজুরিয়া যুদ্ধে লীগ অব নেশন নীরব দর্শকের ভূমিকা গ্রহণ করে।



About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟