ঠান্ডা যুদ্ধস্থ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রকৃতি আলোচনা কর
ঠান্ডা যুদ্ধস্থ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক রাজনীতি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে প্রায় সাড়ে আট দশক জুড়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ২ বৃহৎ শক্তি রূপে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন পরস্পরের বিরোধিতা করে এসেছেন যা ইতিহাসে ঠান্ডা লড়াই নামে পরিচিত ৷ কিন্তু ১৯৯১ সালের সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন বিশ্ব ব্যবস্থা ভারসাম্য বিন্যস্ত করে এবং এক নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার সূচনা করে বিশ্বব্যবস্থা রূপ লাভ করে এবং এর নেতৃত্ব দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৷ এই প্রসঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ বলেছিলেন এক নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা গঠন করতে হবে কিন্তু সেই ব্যবস্থা কি হবে তা তিনি বলেননি তবে পৃথিবী কিছু পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছিল ৷৷
প্রথমতঃ ঠান্ডা যুদ্ধের অবসানের পর ইউরোপের রাষ্ট্রগুলিতে তীব্র রাজনৈতিক সংকট দেখা দেয় ৷ পূর্ব ইউরোপে রাষ্ট্রগুলিতে শুরু হয় এক নতুন পরিস্থিতি ও দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক অস্থিরতা রাশিয়া সহ অন্যান্য এলাকায় বারবার সেই অস্থিরতা তীব্র হয়ে ওঠে ৷
দ্বিতীয়তঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময় থেকে ইউরোপে আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হয় পরবর্তী তার মোকাবেলা করার জন্য গড়ে তোলা হয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ৷ এটি হলো ইউরোপ মহাদেশের অধিকাংশ দেশের একটি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্থা এর অধীনে অভিন্ন মুদ্রা ইউরো, ইউরোপীয় সংসদ ইত্যাদি অনেক বিষয়ে রয়েছে ৷ ইউরো হল মার্কিন ডলারের প্রতিদ্বন্দ্বী৷
তৃতীয়তঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র 1990 সালে এক নয় বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন যা প্রতিষ্ঠিত হবে সহযোগিতার ভিত্তিতে ৷ এই উদ্দেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চেষ্টা করে পরমাণু অস্ত্রের প্রসার রোধ করার জন্য একটি চুক্তিতে অর্থাৎ ১৯৯৬ সালের সিটিবিটি উপস্থাপন করে যদিও ভারত, চীন এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি ৷
চতুর্থতঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ১৯৯৫ সালে বিশ্ব বাণিজ্যিক সংস্থা তৈরি করে ৷ যদিও এটি একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা যা বিশ্বের বাণিজ্য সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণ করে থাকে এই সংস্থা সদর দপ্তর সুইজারল্যান্ড এর জেনিভা শহরে অবস্থিত ৷
পঞ্চমতঃ ঠান্ডা যুদ্ধের প্রেক্ষিতে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের উদ্ভব হয় কিন্তু 1991 সালে ঠান্ডা যুদ্ধের অবসান ঘটলে স্বাভাবিকভাবে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে ৷ এই প্রেক্ষাপট জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন নয় সাম্রাজ্যবাদ ও নয়া উপনিবেশিকতাবাদ বাদের বিরুদ্ধে নিবারিত মানুষের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয় ৷
ষষ্ঠতঃ ঠান্ডা যুদ্ধ তো পর্বে বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠন উঠেছে যেমন আরসিয়ান,আফ্রিকান ইউনিয়ন ,সার্ক প্রভৃতি এছাড়াও গড়ে উঠেছে ব্রিক্স, এর মত অধি জাতির আঞ্চলিক সংগঠনগুলো মূলত অর্থনৈতিক স্বার্থ ও সহযোগিতার ভিত্তিতে এইসব সংগঠন গুলি গড়ে উঠেছে ৷
সপ্তমতঃ ঠান্ডা যুদ্ধতো পর্বের ন্যাটোর ক্ষমতা অনেকক্ষণ সে বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ ২০১১ থেকে ১২ সালের লিবিয়া ,মিশর ,তিনোসেনিয়া, সিরিয়া প্রভৃতি রাষ্ট্রের নাটোর অগ্রাসন বৃদ্ধি পাচ্ছে এছাড়া ন্যাটোর বিরুদ্ধে পক্ষপাত মূলক পদক্ষেপ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে ৷
অষ্টমতঃ বিশ্বাস শক্তিশালী আটটি দেশকে নিয়ে G8 অর্থাৎ গ্রুপ অফ এইট গঠিত হয়েছে ৷ এ ৷ এই রাষ্ট্রগুলি হল কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ,জাপান ,রাশিয়া ,আমেরিকা এবং ইংল্যান্ড এই গোষ্ঠীটির উদ্দেশ্য হল একটি নিরাপত্তামূলক বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তোলা ও এর মধ্য দিয়ে পারস্পারিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা বা আক্রমণকে পতিয়ত করা ৷
নবমতঃ ঠান্ডা যুদ্ধ তো পর্বে বিশ্বব্যবস্থা ধর্মীয় মৌলভাব, ধর্মীয় সম্প্রদায় ও মতাদর্শ ভিত্তি সন্ত্রাসবাদ আন্তর্জাতিক রুপ্লব করে সন্ত্রাসবাদ আজও সমগ্র বিশ্বের কাছে ত্রাসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করছে এবং সমগ্র বিশ্বকে অস্থির করে তুলেছে ৷
পরিশেষে বলা যায় ঠান্ডা যুদ্ধকালে আন্তর্জাতিক রাজনীতি অত্যন্ত জটিল আকার ধারণ করেছে ৷ তাই সহজে এর পত্তি কি নির্মাণ করা যাবে না । বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলি দুর্বল রাষ্ট্রগুলির ওপর অর্থনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার ক্রমাগত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আর সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ একে আন্তর্জাতিক সংস্থা হওয়ার সত্ত্বেও শক্তিশালী দেশের চাপে নিবর দর্শকের ভূমিকা পালন করছে । নতুন নতুন শক্তির উত্থান ঘটার সাথে সাথে নতুন বিষয়বস্তুর উদ্ভব আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা প্রকৃতিগত পরিবর্তন সাধন করে চলেছে ৷