মুঘল আমলে সামরিক প্রযুক্তি বিদ্যা সম্পর্কে সংক্ষেপে বর্ণনা করো
মুঘল যুগে বাবরের শাসনাকাল থেকে সামরিক ক্ষেত্রে প্রযুক্তি বিদ্যার প্রয়োগ লক্ষ করা হয়েছে । বাবরের রাজত্বকাল থেকে, কামান এবং বন্দুকের নিয়মিত ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় । এর আগে ভারতীয়রা আগ্নেয়াস্ত্রের সঙ্গে পরিচিতি ছিল না । আবুল ফজলের মতে, আকবরের বন্দুক ও হাত কামানের প্রতি বিশেষ অনুরাগ ছিল । তবে অবশ্য এগুলি ছিল গাদা বন্দুক জাতের ভারতীয়রা ইউরোপদের অনুকরণের পটু ছিল । পরবর্তী শুধু বার্নিয়ে নয় টাওর্নিয়েও ভারতীয় বিশেষত গোলকুন্ডার বন্দুকের ভুয়সী প্রশংসা করেছেন । আকবর বন্দুকের নল শক্ত করার কৌশল তৈরি করেছিলেন । ষোড়শ শতকে আকবরের শাসনামলে ইউরোপে চাকাযুক্ত ঘোড়ার বন্দুকের প্রয়োগ চালু হয় । সপ্তদশ শতকের শেষভাগে মুঘল বন্দুকধারীরা এই ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করত । "Flint lock" কামানটি জাহাঙ্গীরের শাসনামলে চালু হয় এবং ভারতীয়রা ক্রমশ উন্নত মানের বন্দুক তৈরি করতে সক্ষম হলেও, বন্দুকধারীদের কোন বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হত না ।
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
ভারতীয় কামান গুলি ছিল অতিকায় । বাবরের সময়েই ভারতের সবচেয়ে বড় কামান প্রস্তুত হয় ৷আবুল ফজল বলেছেন যে আকবরের শাসনামলে দুটি ধরণের কামান উদ্ভাবিত হয়েছিল । প্রথমটি ছিল হালকা জাতীয় বর্ণমান, যার বিভাগগুলি পৃথকভাবে খোলা এবং অন্যান্য স্থানে পরিবহন করা যেতে পারে । দ্বিতীয় ধরণের বন্দুকের সাথে, 17 টি কামান ইচ্ছাকৃতভাবে এমনভাবে সংযুক্ত করা হয়েছিল যে একটি গোলা ছুঁড়লেই বাকিগুলোর গোলা বেরতে থাকে । তবে ভারতীয়রা যুদ্ধক্ষেত্রে গোলা বারুদের ব্যবহারে দুঃখ ছিল না। ফলে তারা বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে আমদানির ওপর নির্ভরশীল ছিল । ট্যাডরনিয়ে বলেন যে," মীর জুমালার কামান নিক্ষেপ করার জন্য আমস্টারডাম থেকে ডাচদেরও আনা হয়েছিল ।" মুঘল আমলে হাত বোমা ও গোলার ব্যবহারের প্রচলিত ছিল না । এটা সুস্পষ্ট ছিল যে,ভারতের বিহারে প্রাপ্ত সোরার গুণমান ছিল উন্নত ৷ তবে সোরার থেকে বারুদ প্রস্তুতের কৌশল মুঘলদের অজানা ছিল । ভারতে সোরা শোধন ব্যবস্থা দীর্ঘ স্থায়ী ছিল না । ভারতীয় সেরা থেকে বারুদ উন্নতমানের ছিল না বলেই ইউরোপীয়রা মনে করত ।
ভারতের মালাবার এলাকায় কামান বন্দুক জনপ্রিয় ছিল ৷ ইউরোপীয় সেনারা বারুদ গোলার উপযুক্ত করতে পারদর্শী ছিল,ফলে মুঘল বাহিনীতে পর্তুগুয়েজ অলন্দাজ প্রভৃতি ইউরোপীয়রা নিযুক্ত ছিল ৷ মুঘলদের মতো শিবাজীও ইউরোপীয় গোলন্দাজদের তাঁদের সাহায্য নিয়েছিলেন ৷