সুলতানি সাম্রাজ্যের পতনের চারটি কারণ উল্লেখ করো।
ইলতুতমিশ, আলাউদ্দিন খলজি ও মহম্মদ বিন তুঘলকের বাহুবল ও প্রতিভা দ্বারা যে-বিশাল সুলতানি সাহাজ্য গড়ে ওঠে তা নানা কারণে পতনোমুখ হয় ।
সুলতানি সাম্রাজ্যের বিশালতা ছিল এই সাম্রাজ্যের পতনের একটি অন্যতম কারণ । অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্যাকে কাজে লাগিয়ে প্রায়শই প্রাদেশিক শাসনকর্তাগণ বিদ্রোহ ঘোষণা করতেন । তাঁদের স্বাধীনতালাভের ঘটনাও ব্যতিক্রম ছিল না। ফলে সুলতানি সাম্রাজ্যের কেন্দ্রীয় শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে । এই বিদ্রোহগুলি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা পরবর্তী সুলতানদের ছিল না ।
মনে রাখতে হবে সুলতানি সাম্রাজ্যের ভিত্তি ছিল সামরিক শক্তি । গিয়াসউদ্দিন বলবন ও আলাউদ্দিন খলজির মতো স্বৈরাচারী শাসক জনগনের কোনো সমর্থন পায়নি ।
সুলতানি সাম্রাজ্য পতনের দায় থেকে মহম্মদ বিন তুঘলককে কোনোমতেই রেহাই দেওয়া যায় না । তিনি বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে গিয়ে চরম ব্যর্থতায় পর্যবসিত হন । এতে সুলতানি সাম্রাজ্যের অর্থভাণ্ডার দেউলিয়া হয়ে পড়ে । এর প্রভাব পড়ে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে, যার ফল ছিল প্রাদেশিক বিদ্রোহ সংগঠিত হয় । স্বভাবতই তাঁর আমলে সুলতানি সাম্রাজ্যের বিপর্যয় ঘটে ।
সুলতানি সাম্রাজ্য পতনের আর-একটি কারণ ছিল বৈদেশিক আক্রমণ । সুলতানি যুগের প্রথমদিকে ভারতবর্ষে বারবার মোঙ্গল আক্রমণ হয়েছে । সবচেয়ে বড়ো আঘাতটি আসে ১৩৬৮ খ্রিস্টাব্দে সুলতান নাসিরউদ্দিন মাহমুদের রাজত্বকালে । এই সময় তৈমুর লঙের ভারত আক্রমণ ও লুন্ঠনের ঘটনায় দিল্লি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল । যা সামাল দেওয়ার ক্ষমতা পরবর্তী সুলতানদের ছিল না।
শেষ পর্যন্ত ১২২৬ খ্রিস্টাব্দে মোগলবীর বাবর ক্ষয়িষ্ণু সুলতানি সাম্রাজ্যের উপর শেষ মোক্ষম আঘাত হানেন । বাবর ইব্রাহিম লোদিকে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে পরাজিত করে ভারতে মোগল সাম্রাজ্যের সূচনা করে ৷