লর্ড ডালহৌসির সাম্রাজ্য বিস্তার নীতি আলোচনা করো। অথবা, ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য সম্প্রসারণে লর্ড ডালহৌসির অবদান লেখ অথবা, লর্ড ডালহৌসির সাম্রাজ্য বিস্তার নীতি

লর্ড ডালহৌসির সাম্রাজ্য বিস্তার নীতি আলোচনা করো। অথবা, ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য সম্প্রসারণে লর্ড ডালহৌসির অবদান লেখ অথবা, লর্ড ডালহৌসির সাম্রাজ্য বিস্ত

 লর্ড ডালহৌসির সাম্রাজ্য বিস্তার নীতি আলোচনা করো। অথবা, ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য সম্প্রসারণে লর্ড ডালহৌসির অবদান লেখ অথবা, লর্ড ডালহৌসির সাম্রাজ্য বিস্তার নীতি

লর্ড ডালহৌসির সাম্রাজ্য বিস্তার নীতি আলোচনা করো। অথবা, ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য সম্প্রসারণে লর্ড ডালহৌসির অবদান লেখ অথবা, লর্ড ডালহৌসির সাম্রাজ্য বিস্তার নীতি

র্ড ডালহৌসী (১৮৪৮-৫৬ খ্রীঃ) ছিলেন যোর সাম্রাজ্যবাদী এবং সাম্রাজ্যবাদী নীতির জন্যই তিনি ভারতের ইতিহাসে সুপরিচিত। তাঁর আমলেই ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের চরম সম্প্রসারণ ঘটে। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, ভারতীয় শাসনব্যবস্থা অপেক্ষা ব্রিটিশ শাসন ছিল অনেক উন্নত এবং এই কারণে তিনি যথেচ্ছভাবে দেশীয় রাজ্যগুলি গ্রাস করতে দ্বিধাবোধ করেননি। আবার কেউ কেউ মনে করেন যে ভারতীয় রাজ্য গ্রাস করার মূলে ডালহৌসীর উদেশ্য ছিল ভারতে ইংল্যান্ডের বাণিজ্যের প্রসার ঘটান। অযোধ্যা রাজ্যের গ্রাস ও হায়াদ্রাবাদের কয়ে থেকে নেয়ার প্রদেশটি কেড়ে নেওয়ার ব্যাপারে তাঁর এই উদ্দেশ্য প্রতিবলিত দেশ্য যায়। সাম্রাজ্যবিস্তারের জন্য ভালহৌসী কয়েকটি পন্থা গ্রহণ করেন, যথা-(১) যুদ্ধ করে রাজ্যবিস্তার করা, (২) স্বত্ববিলোপ-নীতির প্রয়োগ করে দেশীয় রাজ্য দখল করা এবাং (৩) কুশাষনের অজুহাতে দেশীয় বাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করা। তাঁর বিশ্বাস ছিল যে পাশ্চাত্যের সংস্পর্শে থাকলেই ভারতের কল্যাণ হবে। পার্সিভাল স্পীয়ার-এর কথায় ভালহৌসী বিশ্বাস করতেন "all good things came from the West and the more of them the better."

আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন

যুদ্ধের দ্বারা রাজ্য জয় নীতি অনুসরণ করে প্রথমেই ডালহৌসি শিখদের পরাজিত করে ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দের ৩০ মার্চ সমগ্র পাঞ্জাব ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। এর ফলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য আফগানিস্তানের সীমা পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয় । আফগানিস্তান ও বেলুচিস্তানের সঙ্গে মিত্রতাচুক্তি স্বাক্ষর করে ওই দুই দেশে ব্রিটিশ সরকার প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তার করে । অপরদিকে ব্রহ্মদেশে একমাত্র ইংরেজ বণিকরা ছাড়া অন্য ইউরোপীয় বণিকদের ব্যাবসা ও বসবাসের ওপরে বিধি নিষেধ আরোপ করলে ইঙ্গ-ব্রহ্ম যুদ্ধের সূত্রপাত হয় । ১৮৫২ সালে প্রথম ইঙ্গ-ব্রক্স যুদ্ধে জয়লাভ করে ডালহৌসি ব্রহ্মদেশের শিল্পাঞ্চলের ওপর ইংরেজ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন ।

ডালহৌসির সাম্রাজ্যবিস্তার নীতির কুখ্যাত হাতিয়ার ছিল তাঁর এই স্বত্ববিলোপ নীতি। এই নীতির মূলকথা ছিল এই যে, ইংরেজদের আশ্রিত কোনো রায়ে অপুরক অবস্থায় মারা সেলে সেই রাজ্যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যেভুক্ত করা হবে এবং দত্তক পুত্রের বা কন্যার উত্তরাধিকার স্বীকার করা হবে না। ডালহৌসি স্বত্ববিলোপ নীতি ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করে রাজ্য বিস্তারে উদ্যোগী হন। দত্তক প্রথা প্রয়োগ করর ব্যাপারে, তিনি দেশীয় রাজ্যগুলিকে তিনটি শ্রেণিতে ভাল করেন, যথা (১) কোম্পানির সৃষ্ট দেশীয় রাগাছা (২) কোম্পানির অধীন করণ রাজ্যে এবং (৩) স্বাধীন দেশীয় রাজা।

লর্ড ডালহৌসি এক নির্দেশনামা ঘোষণা করে প্রথম শ্রেণির দেশীয় রাজ্যগুলিতে দত্তক-প্রথা নিষিদ্ধ করেন । দ্বিতীয় শ্রেণির রাজ্যে কোম্পানির অনুমতি ছাড়া দত্তক গ্রহণ করা নিষিদ্ধ করেন এবং স্বাধীন দেশীয় রাজাখাগুলিতে দত্তক প্রথা বহাল রাখেন। ডালহৌসির এই নির্দেশনামা স্বত্ববিলোপ নীতি (Doctrine of lapse) নামে খ্যাত । যেসব রাজ্য এইভাবে সত্ত্ববিলোপ নীতির প্রয়োগের ফলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হয়, সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সাঁতারা (১৮৪৮), জৈতপুর ও সম্বলপুর (১৮৪৯), বাগত (১৮৫০), উদয়পুর (১৮৫২), ঝাঁসি (১৮৫৩) ও নাগপুর (১৮৫৪)।

লর্ড ডালহৌসির সাম্রাজ্য বিস্তার নীতির তৃতীয় পদক্ষেপ ছিল ভাতা ও উপাধি অস্বীকারের মাধ্যমে রাজ্যজয় ৷ কর্ণাটক ও তাঞ্জরের ক্ষেত্রে লর্ড ডালহৌসের স্বত্ববিলোপ নীতির প্রয়োগের সুযোগ ছিল না ৷ তবুও তিনি এইসব রাজ্য দখল করার জন্য নানা ছুতো ও অজুহাত তৈরি করেন ‌৷ ডালহৌসী ইংরেজ প্রদত্ত দেশীয়দের ভাতা ও খেতাবের ক্ষেত্রেও স্বত্ববিলোপ নীতি প্রয়োগ করেন । ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে পেশোয়া দ্বিতীয় বাজীরাও মারা গেলে ডালহৌসী বাজীরাও এর দত্তকপুত্র নানা সাহেবের ভাতা বন্ধ করে দেন। একইভাবে তাঞ্জোরের রাজা মারা গেলে তাঁর দু'কন্যা সন্তান থাকলেও তাঁদের উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয় এবং সে সঙ্গে তাঞ্জোরের রাজপদ ও ভাতা বন্ধ করা হয় । ডালহৌসী মোগল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহের খেতাব ও ভাতা লোপ করার চেষ্টা করেন । কিন্তু পরিচালক সভা বাধা দেয়ার ফলে তিনি সফল হন নি ।

ডালহৌসির রাজ্যজয়ের চতুর্থ ও শেষ পদ্ধতি ছিল কুশাসনের অজুহাত ৷ লর্ড ডালহৌসী কুশাসনের অজুহাতে অযোধ্যা রাজ্যটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন । রাজ্য শাসনের দায়িত্ব নবাবের হাতে থাকলেও প্রকৃত ক্ষমতা ছিল ইংরেজদের হাতে । ফলে রাজ্য শাসনে জটিলতার সৃষ্টি হয় । তাই তাঁকে অযোধ্যা ছেড়ে কলকাতার খিদিরপুরে বারো লক্ষ টাকা নিয়ে বাস করতে বাধ্য করা হয়। ঠিক কুশাসনের কারণে না হলেও হায়দ্রাবাদের নিজাম ইংরেজ সেনাবহিনীর ব্যয়ভার বহনের জন্য যে অর্থ দিতেন তা বাকি পড়ায় ডালহৌসী নিজামের নিকট হতে বেরার প্রদেশটি কেড়ে নিয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন।

ডালহৌসীর পূর্ববর্তী শাসকগণের নীতি ছিল যেখানে পারতপক্ষে ইংরেজ শাসন সম্প্রসারণ না করা, সেখানে ডালহৌসীর নীতি ছিল যতদূর পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা যায় ততদূর পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা। তিনি তাঁর উদ্ভাবিত স্বত্ববিলোপ নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে এদেশীয় নবাব-রাজা ও জমিদার এবং প্রজার মনে ভীতি ও অসন্তোষের সৃষ্টি করেছিলেন। কেননা তাঁরা প্রত্যেকেই তাঁদের রাজ্যের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে সন্দিহান ছিলেন। এ নীতি প্রয়োগের দ্বারা তিনি বিভিন্ন অজুহাতে একের পর এক রাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। ছলে বলে কৌশলে না হলে তিনি যুদ্ধের দ্বারা রাজ্য দখল করতেন। উপরন্তু, লর্ড ডালহৌসির আগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদী নীতি ভারতীয়দের মনে গভীর শঙ্কা ও অসন্তোষের সৃষ্টি করে। দেশীয় রাজ্যগুলি অনুগত হওয়া সত্ত্বেও তাদের প্রতি জঘন্য আচরণের ফলে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি তাদের বৈরী মনোভাব প্রকাশ পায় । দেশীয় রাজন্যবর্গের মনে ব্রিটিশ শাসনের প্রতি ঘৃণা, বিতৃষ্মাও সন্দেহ দানা বাঁধে, যা পরবর্তী বৎসরে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে সিপাহি বিদ্রোহের সূচনা করে।


এই নোটটি পড়ে তুমি কি কি আলোচনা করতে পারবেঃ

  • লর্ড ডালহৌসি কিভাবে ভারতে ইংরেজ শক্তিকে সার্বভৌম শক্তিতে পরিণত করেন সংক্ষেপে বর্ণনা কর ৷



About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟