নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত টীকা

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত টীকা

 নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত টীকা

নালন্দা' শব্দের অর্থ হল জ্ঞান বা জানার আগ্রহ। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচীন ভারত তথ্য এশিয়ার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানরূপে দীর্ঘকাল খ্যাতির শিখরে বিরাজমান ছিল। গুপ্তসম্রাট কুমারগুপ্ত বর্তমান বিহারে নালন্দা জেলায় নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়

ছিল একটি অবৈতনিক আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সরকারি দানে এই প্রতিষ্ঠানের খরচ চলত। স্থানীয় রাজা এবং জমির মালিকরা তো বটেই, এমন কী সুদুর সুমাত্রা দ্বীপের শাসকও এই মহাবিহারের জন্য সম্পদ দান করেছেন। তা থেকে ছাত্রদের বিনা পয়সায় খাবার, জামা-কাপড়, শস্যদ্রব্য ও ওষুধপত্র দেওয়া হত। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে কঠিন প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করে এখানে ভর্তি হতে হত। এরপর সাত-আট বছর এখানে
পড়াশুনা করতে হত।

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত ১৫টি বিষয় পড়ানো হত। বিষয়গুলির মধ্যে অন্যতম ছিল বেদ, বৌন্যদর্শন, ব্যাকরণ, নীতিশাস্ত্র, জ্যোতিষশাস্ত্র, আয়ুর্বেদ, পালি সাহিত্য, গণিতশাস্ত্র, রসায়ন, পদার্থবিদ্যা, ভূগোল, ইতিহাস প্রভৃতি। সব বিষয়ই শিক্ষার্থীদের পড়তে হত। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল প্রন্থাগার ছিল। এর তিনটি ভাগ ছিল। যথা, রত্নরঞ্জক, রত্নদধি ও রত্নসাগর।

হর্ষবর্ধনের আমলে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় খ্যাতির শিখরে পৌঁছেছিল। শুধু ভারত নয় সুদুর তিব্বত, চিন, কোরিয়া এবং মঙ্গোলিয়া থেকে ছাত্ররা এখানে পড়তে আসত। চিন দেশের ছাত্রদের শিক্ষাদানের জন্য বিশেষ তহবিলের বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। এখানে ১০,০০০ ছাত্র ও ১,৫০০ জন শিক্ষক ছিলেন। বিখ্যাত পণ্ডিতগণ এখানে শিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন। হিউয়েন সাঙ খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে এই বিহারে শিক্ষালাভ করেছেন। সেইসময় নালন্দার অধ্যক্ষ ছিলেন বাঙালি পণ্ডিত শীলভদ্র। হর্ষবর্ধন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতির জন্য প্রভূত অর্থ ব্যয় করেছিলেন।

পালরাজারা ছিলেন শিক্ষা ও সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় তার হারানো গৌরব ফিরে পেয়েছিল। পালবংশের শ্রেষ্ঠ রাজা দেবপালের আমলে সুমাত্রার শৈলেন্দ্র বংশীয় রাজা বালপুত্রদেব তাঁর অনুমতি নিয়ে নালন্দায় একটি বৌন্দমঠ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। দেবপালের প্রয়াসে সে যুগে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় বৌদ্ধধর্ম ও সংস্কৃতিচর্চার প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল।

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতি দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে এমনকি ভারতের বাইরের বিভিন্ন দেশ থেকেও ছাত্ররা এখানে পড়াশুনা করতে আসত চিন, তিব্বত, মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, থেকেও ছাত্ররা এখানে আসত। অনেক রাঙ ছিল মধুর। পঠন-পাঠনের বিষয়ে সর্বদা শিক্ষকদের সান্নিধ্য লাভ করতে পারত। তবে সকলকেই কঠোর নিয়মকানুন মেনে চলতে হত।

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ত্রয়োদশ শতক পর্যন্ত শিক্ষার কেন্দ্রভূমি ছিল। তবে ১১৯৯ খ্রিস্টাব্দে তুর্কি সেনাপতি বখতিয়ার খলজির বিহার আক্রমণের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিহার আক্রমণ করে বখতিয়ার খলজি অন্যান্য সৌধের সঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারটিও আগুনে পুড়িয়েছেন। এইভাবে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের পতন। ঘটে। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংসাবশেষ আজও ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে। আছে
তোমাকে অনেক ধন্যবাদ নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত টীকা এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟