ওয়াহাবি কাদের বলা হয় এই আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা কর অথবা ,ওয়াহাবি কাদের বলা হত? এই আন্দোলনের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

ওয়াহাবি কাদের বলা হয় এই আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা কর অথবা ,ওয়াহাবি কাদের বলা হত? এই আন্দোলনের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

ওয়াহাবি কাদের বলা হয় এই আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা কর অথবা, ওয়াহাবি কাদের বলা হত? এই আন্দোলনের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

ওয়াহাবি কাদের বলা হয় এই আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা কর

ওয়াহাবি শব্দটি আরবীয় সংস্কারক, মহম্মদ-বিন- আব্দুল ওয়াহাবের নাম থেকে এসেছে ৷ ওয়াহাবি শব্দটির অর্থ হল নবজাগরন ৷ ওয়াহাবি আন্দোলনের আসল নাম তারিখ-ই-মহমুদিয়া (মহম্মদ নির্দেশিত পথ) অষ্টাদশ শতকের মহম্মদ-বিন-আব্দুলা ওয়াহাব নামক এক ব্যক্তি আরবে ইসলাম ধর্মের কুসংস্কার গুলির বিরুদ্ধে প্রথম এক আন্দোলন গড়ে তোলে তাহা "ওয়াহাবি আন্দোলন' নামে পরিচিত ৷ ইসলাম ধর্মের বিশুদ্ধতা ফিরিয়ে আনতে যারা ওয়াহাবির আদর্শ গ্রহন করেন তাদের ওয়াহাবি বলা হয় ৷

ওয়াহাবি আন্দোলনের সূচনা পর্বে এর মূল লক্ষ্য ছিল ইসলামের শুদ্ধিকরণ "কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই আন্দোলনের লক্ষ্য পরিবর্তীত হয় । আন্দোলন সামন্ত তন্ত্র ও বিট্রিশ বিরোধী হয়ে ওঠে ৷ উত্তর প্রদেশের রায়াবেরিলির আধিবাসী সৈয়দ আহমেদ ছিলেন 'ওয়াহাবি আন্দোলনের' প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা । তিনি অজিতের সঙ্গে মিলিত হয়ে ইসলাম ধর্মের শুদ্ধিকরণের কথা ব্যাপক ভাবে প্রচার করতে শুরু করে । তাদের নেতৃত্বে পরিচালিত ওয়াহাবি আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হয়ে ওঠে সমাজে নিম্নবর্গের মানুষদের আর্থিক সম্পদ থেকে মুক্ত করা এবং বিট্রিশ অপশাসনের মুক্তি হল ।

সৈয়দ আহমেদ তার দুই অনুচর বিলায়েত আলি ও এনায়েত আলিকে নিয়ে ভারতের বিভিন্ন স্থানে ওয়াহাবি কেন্দ্র স্থাপন করে ৷ সৈয়দ আহমেদ তার আন্দোলন শুরু করে ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে । তিনি তার মতামত ব্যাক্ত করে অসংখ্য প্রচারপুস্তিকা দেশের বিভিন্ন স্থানের জনগনের মধ্যে বিতরন করে । এর পাশাপাশি তিনি তার অনুচরদের সামরিক শিক্ষ্যা দেবার ব্যবস্থা করেছেন ৷ এই আন্দোলন মূলত ইংরেজ বিরোধী হলেও পাঞ্জাবের শিখদের সঙ্গে ওয়াহাবিরা সংগ্রামে জড়িয়ে পড়ে । শিখদের বিরুদ্ধে বালাকোটের যুদ্ধে সৈয়দ আহমেদ নিহত হয় তার মৃত্যুব পর এই আন্দোলন উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, পাঞ্জাব, বাংলা, বিহার, সুরাট,হায়দ্রাবাদ ও অন্যান্য অঞ্চলে ব্যাপক আকার ধারন করে ৷

সৈয়দ আহমেদ ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলনকে প্রকৃত রূপে প্রতিষ্ঠিত করে । আর বাংলায় মীর-নিশার আলি বা তিতুমীরের নেতৃত্বে ওয়াহাবি আন্দোলন তার পূর্ণ রূপ পায় । তিতুমীরের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সংগ্রাম বারাসাত বিদ্রোহ নামে পরিচিত । তিতুমীর কিন্তু ওয়াহাবি আদর্শ মেনে চলেননি । তিনি সম্পূর্ণ নিজস্ব আদর্শ ও লক্ষ্য নিয়ে বারাসাত বিদ্রোহ পরিচালনা করেছিলেন ৷ তিতুমীরের নেতৃত্বে বারাসাত বিদ্রোহের মূল লক্ষ্য ছিল সমাজের নিম্ন বর্গের মানুষের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা অর্জন নারী । এছাড়াও তিতুমীর তার অনু- গামীদের যে সকাল আদর্শ মেনে চলার কথা বলেন সেগুলি হল

  1. পির- পয়গম্বকে মানার প্রয়োজন নেই ৷
  2. মন্দির মসজিদ তৈরীর প্রয়োজন নেই
  3. ফয়েতা (শ্রাদ্ধ-শান্তি) অনুষ্ঠান করার প্রয়োজন নেই ৷
  4. অনুগামীদের দাড়ি রাখতে হবে।
  5. সুদে টাকা খাটানো নিষিদ্ধ ৷

তিতুমীরের মূল সংগ্রাম ছিল পিরবাদ ও অত্যাচারী জমিদারদের বিরুদ্ধে চব্বিশ পরগনার জেলার পুড়া গ্রামের জমিদার কৃষ্নদেব রায় তিতুমির অনুগামীদের দাড়ির ওপর বার্ষিক আড়াই টাকা বার ধার্য করে, ওয়াহাবিদের আরবি নাম গ্রহনের ওপর পঞ্চাশ টাকা কার চাপান এবং বলেন তার জমিদারি অলাকার মধ্যে ওয়াহাবি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করলে পাবণ বাড়ির ক্ষেত্রে এক হাজার ও কাঁচা বাড়ির ক্ষেত্রে পাঁচশো টাকা কর আদায় করা হবে ৷ এতে ক্ষুব্দ হয়ে তিতুমির তিনশো জন অনুগামী নিয়ে জমিদার কুষ্নদেব রায়ের বাড়ি আক্রমন করে ৷ এছাড়াও তিনি টাকি ও গোবরডাঙার জমিদারদের কাছ থেকো খাজনা আদায় করে ৷

তিতুমির নিজেকে বাদশাহ হিসাবে ঘোষনা করেন এবং চব্বিশ পরগনা জেলা থেকে দশ কিমি দূরে নারকেল বেড়িয়া গ্রামে একটি বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করে প্রশাসন চালাতে থাকে ৷ তিনি এখান থেকে জমিদার নীলকর এমনকি বারাসাত থেকে বসিরহাট পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে চলা কোম্পানির অপশাসনের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষনা করে । তিতুমির নেতৃত্বে বারাসাত বিদ্রোহ' চরমে পৌঁছালে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিং, তিতুমিরকে দমনের জন্য কর্ণনেল স্টুয়ার্টের নেতৃত্বে দশম পদাতিক বাহিনী পাঠান । ইংরেজ সেনা বাহিনীর কামানের গোলার আঘাতে তিতুর বাঁশের কেল্লা ভেঙে যায় ৷ সংঘর্ষে তিতুমীর প্রাণ হারালে ১৮৩১ খ্রী: ১৯শে নভেম্বর বারাসাত বিদ্রোহের অবসান ঘটে ৷

ওয়াহাবি আন্দোলন শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন কারণে ব্যার্থ হয় যেমন --

  1. সঠিক রাজনৈতিক কর্মসূচী, অস্ত্রসস্ত্র এবং স্বসস্ত্র আন্দোলনের মানসিকতার অভাব এই বিদ্রোহকে ব্যার্থতার দিকে ঠেলে দেয় ।
  2. সু-পরিকল্পিত রণনীতির দ্বারা নিম্নবর্গের মানুষ আন্দোলন পরিচালনা করতে পারেনি ফলে আন্দোলন ব্যর্থ হয়
  3. আন্দোলনের নেত্রীবর্গ হিন্দু সম্প্রদায়কে এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করার কোনো উদ্যোগ দেয়নি। এমনকি তিভূমির সহ বেশ কিছু নেতা হিন্দু জমিদার সহ অভিজাতদের আক্রমন করায় হিন্দু সম্প্রদায় এই বিদ্রোহ থেকে দূরে থাকে ৷
  4. ব্রিটিশদের তীব্র দমন নীতি এই আন্দোলনকে ব্যর্থ করে ।

ওয়াহাবি আন্দোলন আপাত দৃষ্টিতে ব্যার্থ হলেও এর গুরুত্ব অস্বীকার করে যায় না ৷ কৃষকাদের স্বার্থ রক্ষার লক্ষ্যে এই আন্দোলন যে লড়াই নিদর্শন রেখেছিল তা পরবর্তী সময়ে বিট্রিশ বিরোধী আন্দোলনে কৃষক সমাজকে উৎসাহী করে তোলে ৷ জাতীয় আন্দোলনে ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রভাব প্রসঙ্গে ওয়াহাবি আন্দোলনের বিপিন চন্দ্র পাল লিখেছেন, "ওয়াহাবিদের আত্মত্যাগ প্রথম পর্বে জাতীয় আন্দোলনের কর্মীদের গভীর ভাবে প্রভাব ফেলেছিল ৷"

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟