দক্ষিণ ভারতে বকাটকদের শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর ।

দক্ষিণ ভারতে বকাটকদের শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর ।

 দক্ষিণ ভারতে বকাটকদের শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর ।

দক্ষিণ ভারতে বকাটকদের শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর ।

দক্ষিণ ভারতে বকাটকদের শাসন ব্যবস্থা :-


সাতবাহন সাম্রাজ্যের পতনের পর মধ্যপ্রদেশের এক বৃহদাংশ এবং মহারাষ্ট্রের পূর্বাশ্বলে এক শক্তিশালী রাজবংশের প্রতিষ্ঠা হয়। ভারতের ইতিহাসে এই রাজবংশ বাকাটক রাজবংশ নামে পরিচিত। বাকাটকদের রাজনৈতিক শক্তির প্রধান কেন্দ্র ছিল দাক্ষিণাত্যের মধ্যাংশে। সাতবাহনদের অবক্ষয় ও পতনের সুযোগ নিয়ে যে সমস্ত শক্তিগুলি এই অঞ্চলে রাজনৈতিক প্রভুত্ব স্থাপনে সচেষ্ট হয়েছিল তাদের মধ্যে শেষ পর্যন্ত সাফল্য লাভ করেছিল বাকাটকরা। বাকাটকদের এই রাজনৈতিক সাফল্য কিন্তু অনেকাংশে নির্ভর করেছিল তাঁদেরা শাসনব্যবস্থার ওপর। কারণ যে-কোনো রাজবংশের রাজাদের চূড়ান্ত ক্ষমতা নির্ভর করে তাদের সুদক্ষ শাসনব্যবস্থার ওপর, আর বাকটিক শাসকরাও তাঁদের শাসনব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে এগিয়েছিলেন।


বাকাটক রাজ্যটি ছিল রাজতান্ত্রিক এবং এই রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার শীর্ষে ছিল রাজার স্থান। তিনি ছিলেন চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী। তবে তিনি অসীম  ক্ষমতার অধিকারী হলেও প্রজাদের সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের প্রতি তাঁর দৃষ্টি ছিল সজাগ। বাকটিক রাজাগণ ছিলেন সুশাষক ও প্রমাশাসক। এই ভাবমূর্তি উপস্থাপিত হয়েছে বাকাটকদের লোখমালায়। তাবেং রাজা বিভিন্ন রাষ্ট্রে বিভত্ত্ব ছিল। আবার প্রতিটি রাষ্ট্র ছিল বিধর জলা, আহার এবং পূরি (ভোগ)-এ বিভত্ব। বাকটিক লেখগুলিতে কোনো মন্ত্রীসভার উল্লেখ পাওয়া যায় না। সম্ভবত কোনো মন্ত্রীসভার অস্তিত্ব ছিল না। তবে তাই বলে তাঁরা স্বৈরাচারী ছিলেন একথা বরা যায় না। কালিদাসের 'রঘুবংশ' কাব্যে বিদর্ভকে 'সৌরাজ্য রম্য' অর্থাৎ, সুশাসন সমৃদ্ধি বলে বর্ণনা করেছেন। হয়তো প্রজাকল্যাণকামী বাকটিক রাজগণের প্রতি মহাকবির এই প্রচ্ছা স্মৃতি।


বাকাটক রাজারা স্মৃতিশাস্ত্র মান্য করেই রাজ্যশাসন করতেন। তাঁরা গুপ্তরাজাদের ময়ে পরমভট্টারক, মহারাজাধিরাজ, পরমেশ্বর ইত্যাদি জাঁকজমকভরা উপাধি গ্রহণ করতেন না। তাঁরা কেবলমাত্র নিজেদের মহারাজ বলেই পরিচয় দিতেন। তাঁদের রাজপদ ছিল বংশানুক্রমিক। বাকটিক রাজ্যের বেশিরভাগ অংশেই কেন্দ্রের প্রত্যক্ষ শাসন বলবৎ ছিল। বাকাটক লেখমালায় সচিবের উল্লেখ আছে কিন্তু মন্ত্রী বা মন্ত্রী পরিষদের উল্লেখ নেই। তবে সমকালীন রাজাগুলিতে যেমন ছিল, বাকাটক রাজ্যে তেমনই রাজার সহকারী ও পরামর্শদাতা হিসাবে একদল মন্ত্রী অবশ্যই ছিলেন।


শাসনকার্যের সুবিধার জন্য বাকাটক রাজ্য কয়েকটি মুখ্য বিভাগে বিভক্ত ছিল। এই বিভাগকে কখনও রাষ্ট্র বা কখনো রাজ্য বলা হত। বাকাটক রাজ্যের একটি প্রশাসনিক বিভাগ ছিল মার্গ। এটি ছিল ভুক্তির তুলনায় বৃহৎ প্রশাসনিক বিভাগ। বাকাটকদের সর্বনিম্ন প্রশাসনিক বিভাগ হিসাবে গ্রামের উল্লেখ পাওয়া যায়। বাকাটক লেখতে সর্বাধ্যক্ষ নামে একশ্রেণির পদদ রাজপুরুষের উল্লেখ পাওয়া যায়। বাসুদেব বিন্ধু মিরাশির মতে, এই বাই ছিলেন কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক অধিকারণের অধ্যক্ষ। অন্যদিকে সদাশিব অলতেকারের মতে, এই বাস্থি ছিলেন ব্যকাটক রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী। 


বাকটক প্রশাসনে আর একশ্রেণির কর্মচারীর নাম পাওয়া যায় তিনি হলেন কুলপুত্র। তাঁয় কাজ ছিল রাজ্যের শাক্তিশৃঙ্খলা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব। এই কাজে ভট এবং চাট নামে দু ধরনের কর্মচারীরা তাদের সাহায্য করত। ডট অর্থে সৈন্য এবং চাটি বলতে সম্ভবত পুলিশদের বোঝানো হত। কখনো-কখনো চটি, ভট ও কুলপুত্ররা তাঁদের এলাকা পরিদর্শনে যেরোতেন এবং এই পরিদর্শনকালে গ্রাম ও শহরবাসীরা তাঁদের আহার ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করত। বাকটিক লেখমালা থেকে বজুক, সেনাপতি ও দন্দ্রনায়ক নামে আরও তিন প্রকার কর্মচারীর নাম পাওয়া যায়। রজুক নামে কর্মচারী সম্ভবত রাজস্ব বিভাগের সম্পো যুক্ত ছিলেন এবং রাজস্ব আগায়ের জন্য জমির মাপজোখের বিষয়টি দেখাশোনা করত।


বকাটক লেখমালাতে ভূমিদান প্রসঙ্গে সেনাপতির কথা বলা হয়েছে। সেনানায়ক অর্থে ২০ ছিলেন সেনাপতি, এই প্রসঙ্গ থেকে সম্ভবত এটা অনুমিত হয় যে, সেনাপতিকে কিছু বেসামরিক দায়িত্বও পালন করতে হত। আর সামরিক বা বিচার বিভাগের পদস্থ রাজপুরে দিলেন দওনায়ক। তিয়োটী তালশাসনে রাজ্যাধিকৃত নামেও একপ্রকার রাজপুরুষের উল্লেখ পাওয়া যায়। সর্বনিম্ন স্তর অর্থাৎ, গ্রামের শাসন কার্যের দায়িত্ব পালন করতেন গ্রাম প্রধান, গ্রাম মহত্তর, গ্রাম কুটুম্বীরা। তবে এই সমস্ত গ্রাম শাসনের সঙ্গে যুক্ত কর্মচারীদের ক্ষমতা কীরূপ ছিল বা তাদের ওপর ঊর্ধ্বতন কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণ কীরূপ ছিল তা সম্পর্কে বাকাটক লেখমালাতে সেভাবে কিছু উল্লেখ পাওয়া যায় না।


উপরিউক্ত আলোচনা শেষে একথা বলা যায় যে, একটি রাষ্ট্রের বা রাজবংশের স্থায়িত্ব বিশেষভাবে নির্ভর করে সেই রাষ্ট্র বা রাজবংশের শাসনব্যবস্থার ওপর। সুদৃঢ় শাসনব্যবস্থার ওপর নির্ভর করেই কোনো রাজবংশ নিজেদের ক্ষমতা প্রসারিত করতে পারে। আর এইক্ষেত্রে দাক্ষিণাত্যের বাকাটকরাও ব্যতিক্রমী ছিলেন না। তাঁরা নিজেদের সুবিন্যস্ত শাসনব্যবস্থার ওপর ভর দিয়েই দাক্ষিণাত্যের একটি বৃহৎ অংশে নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন।



About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟