মোগল সাম্রাজের প্রতিষ্ঠায় বাবরের ভূমিকা আলোচনা কর
১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে বাবর কতৃক ভারতে মোঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠায় মধুযুগীয় ভারতের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা । দিল্লি সুলতানি শাসনের পতনের যুগে ৷ কেদ্রীভূত শক্তির দূর্বলতার সুযোগে ভারতে সে রাজনৈতিক বিছিন্নতা দেখা দিয়েছিল শক্তিশালী মোঘল বাদশাহের শাসনে সেই বিছিন্নতাবাদী শক্তিগুলি দমিত হয়, এবং পুনরায় এক পরাক্রান্ত কেন্দ্রীয় শক্তির অধীনে ভারতের রাজনৈতিক এক্য ফিরে আসে ।
তুর্কি ভাষায় বাবর কথার অর্থ সিংহ, মোঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবর, ১৪৮৩ খ্রিস্টাব্দে তুর্কিস্থানের অন্তগত ফরগানা নামে রাজ্যে জন্মগ্রহন করেন । পিতৃকূল তুর্কি বীর তৈমূর লং এবং মাতৃকূল মোঙ্গল বীর চেঙ্গিস খান তাঁর পূর্বপুরুষ ৷ তাঁর পিতা ওমর শেখ মিজার মৃত্যুর পরে মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি মধ্যএশিয়ার অন্তগত ক্ষুদ্র ফরগনা রাষ্ট্রের সিংহাসনে বসেন । মাত্র ১৪ বছর বয়সে তিনি সমরখন্দ দখল করলেও যুদ্ধে পরাজিত হয়ে তা তাঁর হস্তাচ্যুত হন । ১৫০৪ খ্রীস্টাব্দে কিছু অনুচরের সাহায্যে তিনি হিন্দুকুশ পর্বত অতিক্রম করে কাবুল অধিকার নেন, কাবুলের উপর আধিপত্য প্রতিটা করার পর, তিমি হিন্দুস্তানের দিকে নজর দেন ।
ভারতের তৎকালীন অভ্যন্তরীন রাজনৈতিক অবস্থা আক্রমনের সুযোগ করে দেয় । দিল্লির সুলতান ইব্রাহিম লোদির অত্যাচারে তাঁর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়া অতিষ্ট হয় ওঠে । এই সময় পাঞ্জাবের শাসাকেরা দৌলত খাঁ লৌদি, দিল্লির সিংহাসন শাসনের অনান্য দাবিদার ইব্রাহিম লেদির পিতৃব্য আলম খাঁ লৌদি বাবরকে ভারত আক্রমনের আমন্ত্রন জানায়, তাদের আমানে সাড়া দিয়ে ১৫২৪ খ্রীঃ বাবর সৈন্য নিয়ে পাঞ্জাবে প্রবেশ করে লাহোর দখল করে। রাবরের রাজ্যজয়ের পরিকল্পনা তাঁর সামন্তকারীদের তার সরকারী দের মনব্রত হয় নি, এবং এই কারণে তারা বাবরের বিরুদ্ধাচারণ করতে লাগল, এর ফলে বাবর প্রত্যাবর্তনে রাজি হন ৷
১৫২৫খ্রীঃ বাবর কামান ও বন্দুক ও ১২ হাজার সৈন্য নিয়ে ভারত আক্রমণ করে দৌলত খাঁ লোদিকে পরাজিত করে, তিনি পাঞ্জার দখল করে, এবং দিল্লির দিকে অগ্রসর হন । দিল্লির প্রান্তরে ইব্রাহিম লোদির সঙ্গে বাবরের যুদ্ধ (১৫২ ৬ খ্রীঃ) বাধে ৷ এই যুদ্ধ ভারতের ইতিহাসে (২৬), প্রথম পানিপথের যুদ্ধ নামে পরিচিত ৷ বাবরের গোলন্দাজ বাহিনীর কাছে ইব্রহিম লোদী পরাজিত ও নিহত হয় ৷ পানিপথের যুদ্ধ ভারতের ইতিহাসে এক অতি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ ৷ এই যুদ্ধের ফলে লোদি বংশের শাসন চিরতরে অবলুপ্ত হয়, দিল্লিও আগ্রা পর্যন্ত বাবরের অধিকারে আসে এবং সমৃদ্ধকাল গঙ্গা যমুনা, উপত্যকার দরজা, তাঁর কাছে উন্মুক্ত হয় ৷
বহু যুদ্ধের বিজয়ী নায়াক রানা সংগ্রাম সিংহ সুলতানি "সাম্রাজ্যের ধ্বংসস্তূপের উপর রাজপুত সাম্রাজ্য স্থাপনে সংকল্প করেন । মুরদাবাদ, চান্দেন্ত, গোয়ালিওর আজমীর প্রভৃতি রাজ্যের রাজপুত রাজা গণ এবং ইব্রাহিম লোদির ভাই মামুদ লোদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে বাবরের বিরুদ্ধে যাত্রা করেন । ১৫২৭ খ্রীঃ খানুয়ার প্রান্তরে সম্মিলিত রাজপুত বাহিনীর বিরুদ্ধে বাবর জয় যুক্ত হন । এর কিছু কাল পরে রানা সংগ্রাম সিংহের মৃত্যু হয় ৷ আর এটি যুদ্ধ জয়লাভের ফলে ভারতে মোগল শাসন এক যুদ্ধ ভিভির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় ৷
রানা সংগ্রাম-সিংহের মৃত্যুর পর তার বিধস্ত অনুচুর
মোদনীরায়ের নেতৃত্বে বাবর মেদিনীরাকে পরাজিত করে চান্দেরী দূর্গ ও অন্যন্য কিছু অঞ্চল নিজ অধিকারে আনে ৷ মৃত ইব্রাহিম লোদির ভ্রাতা মামুদ লোদির নেতৃত্বে এক শক্তি জোট গড়ে তোলে । বাবর তাদের তাদের যুদ্ধযাত্রা করে এলাহাবাদ বারানসী, ও গাজিপুর দখল করে ৷ তিনি ১৫২৯ খ্রীঃ পাটনার কাছে গঙ্গা ও গ্লোন্নার নদীর সংযোগ স্থানে সম্মিলিত আফগানদের পরাজিত করে ইতিহাসে এই যুদ্ধ গেগ্রাট যুদ্ধ নামে পরি পরিচিত (১৫২৯ খ্রীঃ) । এর ফলে নবগঠিত মুষল সাম্রাজ্য সুদৃঢ় হয় ।
বাবর মাত্র ৪ বছর ভারতে ছিলেন । তিনটি যুদ্ধ- জয়ী হয়ে তিনি ভারতে মুষল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন, বাবর নিজেকে ঈশ্বরের প্রতিনিধি বলে মনে করতেন ৷ কিন্তু তিনি নিপতিত্বকে রুপায়িত করতে পারে নি । এর জন্য সাম্রাজ্যে শুষ্ঠ শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা আবশ্যিক ছিল ।তা তিনি করতে পারে নি । বাবর শুধু সুদৃঢ় সেনা নায়কই ছিলেন না, তাঁর সাহিত্য ও চারুকলার প্রতি তীব্র ভালোবাসা ছিল ৷ ফরাসি ভাষায় তিনি সুন্দর কবিতা লিখতেন, এমন কি তুর্কি ভাষাতেও তিনি গদ্য, পদ্য লিখেছিলেন, তাঁর আত্মচরিত "তুজুক- ই বাবরী" তুর্কি ভাষায় লিখিত ৷ এই বিশিষ্ট সাহিত্য কীর্তি ৷ সমসামরিক ভারতের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে এই আত্মজীবনীর গুরুত্ব অপরিসীম ৷ তবে মোঘল সাম্রাজ্যের অতিষ্ঠাতা হিসাবে তিনি ভারতের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় ৷