ত্রিশক্তি মৈত্রী সম্পর্কে আলোচনা কর অথবা ত্রিশক্তি মৈত্রী সম্পর্কে টীকা লেখ অথবা Triple Alliance কী
1870 খ্রিস্টাব্দে সেডানের যুদ্ধে ফ্রান্সকে পরাজিত করে জার্মানি ঐক্য লাভ করেন ৷ 1871 খ্রিস্টাব্দে জার্মানি ঐক্যবদ্ধ হবার পর থেকে ইউরোপীয় রাজনীতির ভার কেন্দ্র হয়ে ওঠে বার্লিন ৷ কূটনীতির জাদুঘর বিসমার্ক হয়ে উঠেছিলেন ইউরোপীয় রাজনীতির মূল নিয়ন্ত্রক ৷ জার্মানির ঐক্য সম্পন্ন করার পর বিসমার্ক মূলত দুটি উদ্দেশ্য নিয়ে ইউরোপীয় রাজনীতিতে আবর্তিত হয়েছিল যথা - প্রথমতঃ জার্মানিকে তিনি একটি "পরিতৃপ্ত দেশ" হিসাবে চিহ্নিত করন ৷ এর ফলে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির জার্মানি সম্পর্কে অহেতুক রীতি দূর হয় এবং জার্মান বিরোধী শক্তি যোগ গঠনে বিরত হয় ৷ দ্বিতীয়তঃ ইউরোপীয় রাজনীতিতে ফ্রান্সকে নিঃসঙ্গ রেখে তাকে দুর্বল করে রাখা ৷
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
উপরিউক্ত দুটি উদ্দেশ্য সফল করার জন্য ১৮৭৩ সালে অস্ট্রিয়া রাশিয়া ও জার্মানির মধ্যে ড্রেসকাইজার বুল্ড বা তিন সম্রাটের মৈত্রী বা ত্রিশক্তি মৈত্রী ৷ যদিও বলকান অঞ্চলে রাশিয়ার স্বার্থ বিঘিন্ন হলে রাশিয়া এই চুক্তি ত্যাগ করেন ৷ এই অবস্থায় বিসমার্ক ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার মধ্যে ত্রিশক্তি মৈত্রী গড়ে তোলেন ৷ এটি ছিল ত্রিশক্তি মৈত্রী প্রথম ধাপ যদিও এরপরেও জার্মানি রাশিয়া আর বন্ধুত্ব লাভে উৎসাহী হয়ে উঠেছিল ৷ এরই ফলস্বরূপ ১৮৮১ সালে জার্মানি অস্ট্রিয়া ও রাশিয়ার মধ্যে ড্রেসকাইজারবুন্ডনিস প্রতিষ্ঠিত হয় ৷ কিন্তু শীঘ্রই বুলগেরিয়ার সংকটকে কেন্দ্র করে রাশিয়া এই চুক্তি ভেঙ্গে বের হয়ে বেরিয়ে যান । কিন্তু ইটালি ও অস্ট্রিয়ার স্বার্থ পরস্পর বিরোধী হওয়ায় দুই দেশের মধ্যে মিত্রতা সম্ভব হচ্ছিল না তবে শীঘ্রই রোম ও টিউনিস দখলকে কেন্দ্র করে ফ্রান্স ও ইটালির মধ্যে সংজ্ঞা দেখা দিলে ইতালি ত্রিশক্তি মৈত্রীতে স্বাক্ষর করতে সম্মত হয় । শেষ পর্যন্ত ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে ভিয়েনা শহরে জার্মানি অস্ট্রিয়া ও ইতালির মধ্যে ত্রিশক্তি মৈত্রী সম্পাদিত হয় ৷
এই চুক্তিতে স্থির হয় ফ্রান্স যদি ইটালিকে আক্রমণ করে তাহলে জার্মানি ও অস্ট্রিয়া ইতালির পক্ষ নেবে, আরো বলা হয় যদি একাধিক শক্তি কোন মিত্র কে আক্রমণ করে তবে তিন মিত্র একসঙ্গে ওই শক্তি জোটের বিরুদ্ধে লড়াই করবে ৷ অন্যদিকে তিন মিত্র শক্তির মধ্যে কোনো দুটি শক্তির মধ্যে বিবাদ দেখা দিলে তৃতীয় শক্তি পুরোপুরি নিরপেক্ষ থাকবে । এইভাবে বিসমার্ক জার্মানির নিরাপত্তা ও ফ্রান্সকে নিঃসঙ্গ করে রাখার সম্পূর্ণ প্রয়াস করেন ৷ 1890 খ্রিস্টাব্দে বিসমার্ক জার্মানির প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে ইউরোপের রাজনীতি পুরোপুরি পরিবর্তন হয়ে যায়, কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়ামের ভ্রান্তনীতি ইউরোপ বা বিশ্বকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয় ৷