স্বরাজ্য দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আলোচনা কর
গান্ধীজীর পরিচালিত অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহিত হলে জাতীয় আন্দোলনে এক শূন্যতা ও হতাশার সৃষ্টি হয়। এছাড়াও এই সময় গান্ধীজীর সহ কংগ্রেসের অনেক নেতাই কারাবন্দি ছিলেন ফলে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে ভাটা পড়ে রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও দেখা দেয় এক অনিশ্চয়তা এক বিকল্প পথের সন্ধানে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস মতিলাল নেহেরু প্রমুখ ও নীতিবর্গ স্বরাজ্য দল প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক কার্যকলাপ চালিয়ে যেতে থাকেন তবে কংগ্রেস ও স্বরাজ্য দলের মধ্যে নীতিগত পার্থক্য খুব বেশি ছিল না দল গঠনের সূচনাতেই বলা হয় এই নতুন দল কংগ্রেসের মধ্যে থেকেই কাজ করবে ।
অসহযোগ আন্দোলনের ফলে ভারতীয়দের মনে যে জাতীয় ভাবধারার প্রসার ঘটেছিল এই আন্দোলন প্রত্যাহত হলে তা থমকে যায় এই নবজাগ্রত জাতীয়তাবাদী ভাবধারার প্রসানে কখনো রাখতে কংগ্রেসের একদল নেতা নতুন দল গঠনের কথা চিন্তা করেন এদের কর্মসূচির ছিল মূলত আইন সভায় প্রবেশ করে সরকারি কাজের বিরোধিতা করা সরকারি বাজেট প্রত্যাহার করা জাতীয় স্বার্থে পরিপূর্বক বিল ও প্রস্তাব উপস্থাপন করে সরকারকে বিভ্রান্ত করা এবং ব্রিটিশ সরকারের অর্থনৈতিক শোষণ বন্ধ করা ৷
জাতীয় কংগ্রেস কোন বিকল্প কর্মসূচি নিতে না পারায় জনগণ স্বরাজ্য দলের সমর্থনের দিকে এগিয়ে আসে এবং 1923 খ্রিস্টাব্দে নভেম্বর মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে স্বরাজ্য দল বাংলাদেশ সহ মধ্যপ্রদেশ যুক্ত প্রদেশ বোম্বাই এবং আসামে ব্যাপকভাবে জয় লাভ করেন ৷
কংগ্রেসের পরিবর্তন কামে নেতা নেতৃবৃন্দ নির্বাচনের অংশ নিয়ে আইন সমেত প্রতিনিধিত্ব করার সূচি নিয়েছিলেন রজনীগণ দত্ত বলেন অসহযোগ প্রত্যাহারের পর একটি অবশ্যই একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ ছিল। বাংলাদেশের হিন্দু মুসলমানদের সাধারণ ৮৫ টি আসনের মধ্যে স্বরাজ্য দল ৪৭ টি আসন লাভ করেছিল মুসলমান সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত আসনের একুশটি পেয়েছিল স্বরাজ চিত্তরঞ্জন দাসের সুদক্ষ নেতৃত্ব স্বরাজ্য দল বাংলায় মুসলিমদের সঙ্গে একটি সমঝোতা এসেছিলেন ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বরে সম্পাদিত এই সমঝোতা চুক্তি বেঙ্গল প্যাক্ট নামে পরিচিত এই চুক্তিতে বলা হয়েছিল যে স্বরাজ্য লাভের পর বাংলায় প্রশাসনিক পদগুলির ৫৫ শতাংশ সংরক্ষিত থাকবে মুসলিমদের জন্য মসজিদে সামনে গান বাজনা বন্ধ করা হবে আর বকরীদের দিনে গোহত্যা নিয়ে কোন প্রশ্ন উঠবে না এর শর্তাবলী আন্তরিকভাবে মানা হয়েছিল বাংলাদেশে।
স্বরাজ্য দল সরকারের কাছে যে দাবিগুলি পেশ করেছিল তাদের মধ্যে অন্যতম হলো প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তন, রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দান , দমন মূলক আইন প্রত্যাহার করা এবং শিল্পের ক্ষেত্রে ভারতীয়দের প্রসার ঘটানো ৷ এছাড়াও একটি নতুন সংবিধান প্রণয়নেরও তারা দাবি জানান ৷ এই সকল দাবিগুলির ভিত্তিতে স্বরাজ্য দল ক্রমশ জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকে এবং পৌরসভা ও কলকাতার কর্পোরেশন এর নির্বাচনে স্বরাজ্য দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ৷ ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের চিত্তরঞ্জন দাসের অকলা প্রণয়ন স্বরাজ দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব দেখা দেয় এবং দুর্বলতা প্রকাশিত হয় ।
স্বরাজ্য দলের দুর্বলতা পাশ্চাত্যের চিত্তরঞ্জন দাসের মৃত্যু ছাড়াও আরো কত গুলি কারণ ছিল যেমন
- আইনসভার জাতীয় স্বার্থ নীতির ক্ষেত্রে স্বরাজ্য দল বাধা দিলেও গভর্নর তার ক্ষমতার বিশেষ প্রয়োগ করে আইন পাস করিয়ে নিতেন।
- সরকারের সঙ্গে অসহযোগিতার পরিবর্তে অনেক স্বরাজ্য দলের নেতারা মন্ত্রিত্বের মহে আদর্শ যুক্ত হয়ে পড়ে ৷
- দলের মধ্যে পারস্পরিক বিভেদ ও দ্বন্দ্ব স্বরাজ্য দলকে দুর্বল করে তোলে ৷
- স্বরাজ্য দলের কাউন্সিল আন্দোলনের যোগদানের কর্মসূচি অপেক্ষা গান্ধীজীর গ্রাম্য নয়ন ও হরিজন কর্মসূচি ছিল অনেক বেশি জনপ্রিয়।
এছাড়া বাংলার প্রথম সারির রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যেমন যতীন্দ্রমোহন ও সুভাষ চন্দ্রের মধ্যে কলকাতার মেয়র পদ নিয়ে বিরোধিতা বাংলার জন মানুষের স্বরাজ্য দল সম্পর্কে হতাশার জন্ম দেয় ৷
কিন্তু তা সত্বেও বলা যায়, অসহযোগ আন্দোলনের ব্যর্থতা ও তথ্য জনিত হতাশা থেকে রাজনৈতিক আন্দোলনের মুক্ত করতে স্বরাজ দলের ভূমিকা ছিল লক্ষণীয় । পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক মনোভাব বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যে অনৈক্য প্রতিফলিত হয়েছিল চিত্তরঞ্জন দাসের উদ্যোগে বেঙ্গল প্যাক্ট সম্পাদনার মধ্যে দিয়ে কিছু সময়ের জন্য হলেও সংঘটিতভাবে ব্রিটিশ বিরোধী কার্যকলাপ চালিয়ে যেতে পেরেছিল ৷ স্বরাজ্য দল যদিও জাতীয় কংগ্রেস কাকিনাড়া অধিবেশনে বেঙ্গল প্যাক্টকে সমর্থন জানায়নি এবং ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে মতিলাল নেহেরু পুরানো প্রতিদ্বন্দ্বী মদনমোহন মালব্য ইনডিপেন্ডেন্ট কংগ্রেস পার্টি গঠন করেছিল ৷