মুঘল আমলে জমিদারি সত্বার প্রকৃতির নিয়ে সংক্ষিপ্ত নিবন্ধ লেখ

মুঘল আমলে জমিদারি সত্বার প্রকৃতির নিয়ে সংক্ষিপ্ত নিবন্ধ লেখ

মুঘল আমলে জমিদারি সত্বার প্রকৃতির নিয়ে সংক্ষিপ্ত নিবন্ধ লেখ

মুঘল আমলে জমিদারি সত্বার প্রকৃতির নিয়ে সংক্ষিপ্ত নিবন্ধ লেখ
ভারতবর্ষ কৃষি প্রধান দেশ ৷ ভারতীয় অর্থনীতির মূল ভিত্তি হলো কৃষি উৎপাদন ৷ মুঘল আমলের কৃষি ব্যবস্থার সঠিকভাবে পরিচালনা ও রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থা জমির মালিকানা প্রভৃতি পরিকাঠামোগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছিল ৷ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল জমিদারি ব্যবস্থা । অধিকাংশ পন্ডিতের মতে জমিদারি শব্দটির উদ্ভব ও প্রচলন হয়েছে মুঘল আমলে ৷ আক্ষরিকভাবে জমিদারের অর্থ যার জমি আছে ৷ ঐতিহাসিক সৈয়দ নুরুল হাসান মন্তব্য করেছেন মধ্যযুগীয় ভারতের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের জমিদার শ্রেণী একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল ৷ ঐতিহাসিক শ্রীমঙ্গল লিখেছেন যে আক্ষরিক অর্থে জমিদার হলেন সেই ব্যক্তি যিনি জমির অধিকারী, কিন্তু এখনের অর্থ শহরের জমির মালিক এবং চাষবাস চালাচ্ছেন ৷"

ডঃ এন এ সিদ্দিকী লিখেছেন যে সরকার জমিদার সম্পর্ক নিয়ন্ত্রিত হত জমিদারের দ্বিবিদ সত্তার ভিত্তিতে ৷ একদিকে তিনি ছিলেন ভূমিসত্ত্ব ভোগী প্রজা এবং অন্যদিকে তিনি ছিলেন মধ্যসত্ত্ব ভোগী ৷" এই দ্বিতীয় ভূমিকায় তার ভূমিকা ছিল সরকারি কর্মচারী নির্ধারিত রাজস্ব সংগ্রহ এবং জমিতে যথার্থ ভাবে উৎপাদন কাজ অব্যাহত আছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা ৷ সম্ভবত আইনের চোখে জমিদারের দুটি সত্তার সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র মর্যাদা স্বীকৃত ছিল জমির প্রতি গভীর মমতা বৌধ দ্বারা জড়িত ছিলেন গ্রামীণ জমিদার শ্রেণি ৷ প্রাক মুঘল যুগে এই সকল মধ্যসত্ত্ব ভোগীরা খুৎ, চৌধুরী,মুকাদ্দম ইত্যাদি নামে পরিচিত ৷

প্রাথমিক পর্বে জমিদাররা ছিলেন জমির মালিক আবার একই সঙ্গে রাজস্ব আদায়কারী এই বর্গের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন মালিক কৃষক ৷ এরা নিজেরাই শ্রমিক দিয়ে চাষ করতেন ৷ আবার কৃষকদের কাছ থেকেও রাজস্ব আদায় করতেন ,এদের অধিকার ছিল বংশগত ও হস্তান্তরযোগ্য ৷ অধ্যাপক ইরফান হাবিব মন্তব্য করেছেন নিজের স্বার্থে মুঘল শাসকরা বিভিন্ন উপায়ে জমিদারদের ক্ষমতা খর্ব করতে আগ্রহী ছিলেন ৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও মুঘল আমলে জমিদারদের প্রভাব প্রতিপক্ষ ও ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছিল ৷

রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে জমিদার শ্রেণী ভূমিকা ছিল দ্বিবিধ ৷ যেমন কখনো তারা রাষ্ট্রের সহায়ক মন্ত্র হিসাবে কাজ করেছে আবার কখনো ধ্বংসাত্মক হিসেবেও কাজ করেছেন ৷ যখন জমিদার মধ্য সত্ত্বেও ভোগীর জমিদার প্রমুখেরা রাষ্ট্রকে শাসন সহ হিসেবে উচ্চ মনসবদারি পদ অলংকৃত করে এবং দেশের আর্থিক মেরুদণ্ড স্বরূপ রাজস্ব প্রদান করে তখন তারা রাষ্ট্রের সহায়ক মন্ত্রী ভূমিকা পালন করেছে ৷

গ্রামাঞ্চলের সাধারণ নাগরিক ও কৃষকদের কাছে জমিদারগণ ছিলেন রাষ্ট্রের প্রতিনিধি ৷ তাই কেন্দ্রীয় শক্তির বিরুদ্ধে যখন জমিদারগঞ্জ সোচ্চার হতেন তখন অধিকাংশই ক্ষেত্রে আঞ্চলিক কৃষকরা জমিদারদের পক্ষ নিত ৷ বলাই যায় কৃষকদের কাছে জমিদারগণ ছিলেন রাষ্ট্রের প্রভু স্বরুপ তাই তারা সর্বদা জমিদারদের মর্যাদা পুষ্ট করে চলতেন। এই ভাবেই জমিদারদের প্রতাপ পতিপত্র দিনে দিনে বৃদ্ধি পেতে থাকে ৷

পরিশেষে বলা যায় জমিদারদের ক্ষমতা বৃদ্ধির মূল কারণ ছিল কৃষকদের সহযোগিতা বা কৃষকদের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করে রাষ্ট্র ও তার ব্যয় নির্বাহ করত ৷ এই প্রসঙ্গে অধ্যাপক নুরুল হাসান দেখিয়েছেন যে মুঘল আমলে সম্রাটকে যে সকল প্রশাসনিক সমস্যা সম্মুখীন হতে হয়েছিল তার অধিকাংশই ছিল জমিদারদের সৃষ্টি ,কিন্তু একই সঙ্গে তাদের সমর্থনের উপরেও প্রশাসনকে বেশি নির্ভর করতে হতো ৷ তার মধ্যে জমিদারদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে ধরে যেমন বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন মানুষের মধ্যে সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন ঘটেছিল, তেমনি জমিদারদের পরোক্ষ মদতেই সারা দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী আঞ্চলিকতাবাদী ও সংকীর্ণতাবাদী শক্তি গুলি মাথাচাড়া দিয়েছিল ৷

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟